ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫ , ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূঞাপুরে রাতের আঁধারে সড়ক ঢালাই, ভিডিও করায় যুবককে মারধর


আপডেট সময় : ২০২৫-০৩-১৯ ১৯:৪৭:৪৭
ভূঞাপুরে রাতের আঁধারে সড়ক ঢালাই, ভিডিও করায় যুবককে মারধর ভূঞাপুরে রাতের আঁধারে সড়ক ঢালাই, ভিডিও করায় যুবককে মারধর





মোঃ শহিদুল ইসয়াম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে রাতের আঁধারে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে সড়ক ঢালাই দিচ্ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এসময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে স্থানীয় যুবদল নেতা ইসহাক সরকারের নেতৃত্বে রেজাউল করিম নামের এক যুবককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাত ৯টার দিকে উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের মাইজবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময়কার কয়েকটি ভিডিও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ লাখ টাকা অর্থায়নে মাইজবাড়ী এলাকায় ৩০০ মিটার একটি গ্রামীণ রাস্তার কাজ করছিলেন গোপালপুর উপজেলার আলমনগর এলাকার ঠিকাদার মোতালেব হোসেন (দুলাল)। নির্মাণাধীন ঐ রাস্তাটি মঙ্গলবার রাতের আঁধারে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে নিয়মবহির্ভূতভাবে তড়িঘড়ি করে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে বাধা দিলে ঠিকাদার পক্ষের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। পরে ওই এলাকার যুবদলের সভাপতি ইসহাক সরকারের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীমসহ একদল লোক তাদের ওপর চড়াও হয়ে নানাভাবে হুমকি দেয়। এসময় রাস্তার ভিডিও করতে গেলে রেজাউল করিম নামে এক যুবককে বেধড়ক মারধর করা হয়।

ভুক্তভোগী রেজাউল করিম বলেন, আমরা ভালো কাজ চাই বলে প্রতিবাদ করেছিলাম। রাস্তা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী এবং ঢালাইয়ের পরিমান কম দিয়ে রাতের আঁধারে রাস্তা ঢালাই করছিলেন তারা। আমরা এলাকাবাসী প্রতিবাদ করি এবং আমি ভিডিও করতে গেলে ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি এসহাক ও সম্পাদক আলীম আমার ওপর আক্রমণ করে, আমাকে মারধর করে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রস্তুতি চলছে।

এলাকাবাসী জানায়, ৪ ইঞ্চি ঢালাই করার কথা থাকলেও করা হচ্ছিল দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি। এছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করার প্রতিবাদ জানালে ঠিকাদারের লোকজনসহ এসহাক ও আলীম তাদের ওপর চড়াও হয়। এসময় তারা রেজাউলকে মারধর করে এবং সেই রাস্তার ঢালাইয়ে ফেলে দিয়ে তাকেসহ ঢালাই করার হুমকিও দেয়। পরে রাতেই তাঁরা ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. পপি খাতুনকে বিষয়টি মুঠোফোনে অবগত করেন।

এদিকে এ ঘটনার একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে তাড়াহুড়া করে সড়কের ঢালাই করছিলেন ঠিকাদারের লোকজন। সেটির ভিডিও করতে গেলে 'তুই কীসের ভিডিও করস' বলেই তার ওপর হামলা চালানো হয়।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবাদকারীদের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছেন ঠিকাদারের লোকজন। এছাড়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ নানা হুমকিও দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা ইসহাক সরকার বলেন, তেমন কিছুই হয়নি। একটু জোরে জোরে কথা কাটাকাটি হইছে তাই ভাবছে মারামারি। আসলে কিছু হয়নি। এ বিষয়ে ফলদা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু সাঈদকে মোবাইলে কল করলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং পরে আর ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া ঠিকাদার মোতালেব হোসেন দুলালকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলু বলেন, যে কাজটি হচ্ছে, সেটা যথাযথ হোক এটাই কাম্য। আর রাতে ঢালাই দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই, এহেন কর্মকান্ডের নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানাই। এসময় যুবদল নেতার নেতৃত্বে এক যুবককে মারধরের বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এছাড়া এ ঘটনায় উপজেলা যুবদলের একাধিক নেতাকে কল দেওয়া হলেও তাঁরা গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. পপি খাতুন জানান, খবর পেয়ে আমি সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রাতের আঁধারে কাজটি ভালো করেনি। সেখানে কিছ নিম্নমানের উপকরণ আছে। নির্ধারিত সময় এবং নিয়মানুযায়ী কাজ না করলে ওই ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে না সেইসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকায় রাখা হবে।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ